আমাদের দেশে সংস্কৃতির চর্চা বেড়ে যাচ্ছে। সংগীত, নৃত্য, সাহিত্য, মানুষের পোশাক, উৎসব সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সংস্কৃতি (culture) শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন রোমের সিসেরো তার ‘তুসকালেনে ডিসপুটেশনস’ ( Tusculanae Disputationes) গ্রন্থে। সিসেরোর মতে পরিশীলিত চিন্তা, রুচি, আচরণই সুষ্ঠু সংস্কৃতিকে বিকশিত করতে পারে।
আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে যুক্ত হয়েছে নতুনত্ব সাহিত্যের রস, নতুনত্ব সংগীতের সুর, পোশাকেও এসেছে নতুন মাত্রা। তবে আমাদের দেশের আধুনিক সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা করা যায়। আজ থেকে ত্রিশ বছর পূর্বে কেমন ছিল আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি? কিংবা আজ থেকে ত্রিশ বছর পরে কোন রুপে রুপান্তরিত হবে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।
সমাজের সুষ্ঠু সংস্কৃতিকে খুব সহজেই সবাই সমান ভাবে গ্রহণ করে। আবার উপসংস্কৃতি একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠীর মাঝে বিদ্যমান থাকে। একে কেউ কেউ দারিদ্র্যের সংস্কৃতি বলে উল্লেখ করেন। তবে সমাজের সুষ্ঠু সংস্কৃতি কিংবা উপসংস্কৃতির চেয়ে মানুষ এখন বিপরীত সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছেন বেশি। এ কথা নিরদ্বিধায় বলা যেতে পারে। বিপরীত সংস্কৃতি চর্চা আজকাল একটা স্টাইল হয়ে দাড়িয়েছে। আজকাল বিপরীত সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যম খুব সহজেই পরিচিতি অর্জন করা যায়।
অ্যান্ডি ওয়ারহল বলেছেন, “অর্থ উপার্জন এক প্রকার শিল্প। কাজ করাও শিল্প। আর ভালো ব্যবসা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ শিল্প।” তবে সব শিল্পী কি তার শিল্পকে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী দাড় করাতে পারেন? কেউ পারেন অথবা কেউ কেউ ব্যর্থ হন। সময় ব্যর্থতাকে খুব একটা গ্রহণ করে না, ইতিহাসও এর বাইরে নয়!
বেশ ক’দিন থেকে হিরো আলম নামটি পত্র পত্রিকায় চোখে পড়বার মতো। একজন হিরো আলম ও আমাদের সুষ্ঠু সংস্কৃতি। সংস্কৃতির ইতিহাস বলে,একজন মানুষ তখনই সুষ্ঠু সংস্কৃতি লালন করে, যখন সে সুষ্ঠু পরিবেশে বড়ো হয়ে ওঠে। হিরো আলমের অতীত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় – তার অভাব ছিলো, দরিদ্রতা ছিলো, স্বরবর্ণ কিংবা ব্যাঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ কেউ তাকে হাতে কলমে শিখিয়ে দেয়নি। এটা সমাজের ব্যর্থতা, দেশের ব্যর্থতা। হিরো আলম যদি প্রশ্ন করেন, ভালো পরিবেশ কেনো আমাকে উপহার দাওনি। খুব সম্ভবত সুশীল সমাজকে হিরো আলমের উত্তর দিতে বেশ বেগ পেতে হবে! তাই আমরা ধরেই নিতে পারি পেটে ক্ষুধা নিয়ে বড়ো হয়ে ওঠা একজন মানুষের মাঝে কিছু অপূর্ণতা থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়।
এখন কথা হচ্ছে একজন হিরো আলম সুষ্ঠু সংস্কৃতিকে কতটা বিপথে নিয়ে যাতে পারেন? হিরো আলম নিজেও বলেছেন, ভালো লাগা থেকে তিনি গেয়ে থাকেন। ভালো না লাগলে এড়িয়ে যেতে পারেন। হিরো আলম নিজেকে কখনোই সংস্কৃতি চর্চার ধারক কিংবা বাহক হিসেবে জাহির করেননি। অথচ আমরা তাকে এড়িয়ে যেতে পারি না। তাকে আমরা আলোচনার তুঙ্গে রাখি। হিরো আলম তার ইচ্ছে আর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে নিজেকে একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন! হিরো আলমের মতো প্রত্যেক যুবকের ইচ্ছে আর সাধনা থাকা উচিত!
হিরো আলমকে মুচলেকা দিয়ে তার বাক স্বাধীনতাকে হরণ করা কতটা যৌক্তিক। আমাদের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ৩৯ (ক) এর অনুচ্ছেদে বাক স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ল্যাক্সি তার গ্রামার অফ পলিটিক্স গ্রন্থে বলেছেন, ” স্বাধীনতা হলো এমন একটি পরিবেশ যা সযত্নে রক্ষা করা হয় এবং যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মপ্রকাশের সুযোগ পায়। আমরা হিরো আলমের বাক স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কতটুকু সাহায্য করতে পেরেছি তা ভাববার বিষয়।
আমাদের দেশের গৌরবময় সংস্কৃতির ইতিহাস ক্রমশ যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে তা অনেকেই নিরদ্বিধায় স্বীকার করবেন। এই গৌরবময় সংস্কৃতিকে বাঁচাতে হবে শিল্প দিয়ে, মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে। আইন কিংবা মুচলেকা দিয়ে নয়!
লেখক- মনিরল ইসলাম মুকুল, শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।